Header Ads

https://drive.google.com/file/d/1KYvwcVfpdZA0pOa_z8Gqbqub5aWa8YEk/view?usp=sharing.jpg

নো ম্যান্স ল্যান্ডে পূজিতা হন মা দুর্গা । কাঁটাতারের বাধা পার করেও উৎসবের মরসুম মানিকপুরে ।


শ্রীভূমি । ১৭ সেপ্টেম্বর

অখন্ড ভারত । বসেনি কাঁটাতার । পুজো ছিল সবার । চাঁদা দিয়ে দুর্গাপুজোর ব্যবস্থা করতেন বৃহত্তর এলাকার মানুষ । সে সব আজ অতীত । ভাগ হয়েছে বাংলা । পাহারা বসেছে বিএসএফ-বিজিবির । যদিও এখন সময় বদলেছে। কিন্তু পুজোর রীতিতে কোনও বদল আসেনি । বন্ধ হয়নি দুর্গাপূজার । শ্রীভূমির জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা ভারত বাংলা সীমান্তের মানিকপুরের দুর্গাপুজো যেন এক বিস্ময় । পুজোর আয়োজন করা হয় নো ম্যান্স ল্যান্ডে । কাঁটা তারের ওপারেই দশভূজার স্থায়ী মন্দির । একই দেওয়ালে রয়েছে বিএসএফ জওয়ানদের ছাউনিও।


আর সেখানে পুজো দিতে যেতে হয় কাঁটাতারের বেড়া পার হয়েই । দুই দেশের সীমান্ত রেখায় প্রতি বছর আয়োজন করা হয় বিশেষ এই দুর্গাপুজোর । প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় আগে তৈরি হয় মানিকপুরের দুর্গা মন্দির । দেশ স্বাধীনের পর অখন্ড ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয় মন্দির । মানিকপুর গ্রাম এবং ওই মন্দিরের মধ্যে আছে কাঁটাতারের বেড়া । সীমান্তে মোতায়েন বিএসএফ এর ১৬ নং বাহিনীর জওয়ানরা । সব সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের কড়া নজরদারি এবং পাহারা থাকলে গ্রাম এবং মন্দিরের মধ্যে কাঁটাতার এবং সীমান্তের বেড়া বাসিন্দাদের উৎসাহ এবং আবেগকে ম্লান করতে পারেনি । প্রতি বছর ব্যাপক এবং নিরন্তর আনন্দ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন গ্রামের বাসিন্দারা । ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবারে ও ।

মানিকপুর দুর্গাবাড়ির এবারের পূজা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন পরিমল মালাকার, সম্পাদক চম্পক মালাকার, সহ-সম্পাদক অশোক দাস, কোষাধ্যক্ষ অর্পণ মালাকার, সহ-কোষাধ্যক্ষ অরিজিৎ মালাকার, সাংঘটনিক সম্পাদক অসিত দাস । নির্দিষ্ট বাজেট নেই তাদের । সকলের দানে এবারের সীমিত সামর্থে উমা আরাধনার আয়োজন । আর্থিক অনটনে পুজোর বাজেটে কাটছাঁট হয় প্রতিবার । মন্দিরের সামনেই প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। কাঁটাতার পেরিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিমা আসবে জেলা সদর থেকে । প্রতিমা নিরঞ্জন হবে তারবন্দি মানিকপুর গ্রামেই । তবে বাজেট কম হলেও আনন্দে খামতি থাকে না এলাকাবাসীর।

মন্দির কমিটি সভাপতি অপু মালাকার জানান, আলোর ঝলকানি মানিকপুরের মন্দিরের না থাকলে সাত্বিকতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে । বলেন, যেহেতু ভারত বাংলা সীমান্ত তাই দেশের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে বিএসএফ এর বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুসারে তাদেরকে উৎসবের আয়োজন করতে হয় । সন্ধ্যা আরতি সহ বিসর্জন পর্ব তাদের সারতে হয় দিনের আলোতেই । অপু মালাকার বলেন, বহু দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা মায়ের আশীর্বাদ নিতে ছুটে আসেন মন্দিরে । উৎসবের প্রতিদিন মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়ে থাকে ।

গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকে জানান, মানিকপুরের মন্দির হচ্ছে ঐতিহাসিক মন্দির । কাঁটাতারের ভিতরের স্থানে অবস্থান হওয়ার কারণে এই মন্দিরের গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা বলেন, এখানে পুজো শুরু হওয়ার অনেক পরে দেশ ভাগ হয়, বর্তমানে দেশের নিরাপত্তার কারণে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। তাই বলে পুজো বন্ধ হয়নি । জানান,


বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখন এই গ্রামে বেশ কয়েকটি দুর্গাপুজা হয় । কিন্তু প্রাচীন পুজো বলে এখানেই আনন্দে মাতেন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা । বিএসএফ জওয়ানেরা মণ্ডপে এসে আমাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজোর অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে প্রসাদ বিতরণ সবেতেই জওয়ানদের অংশগ্রহণ করে থাকে। এমনকী সীমান্ত সড়কের উপর দিয়ে ভাসানের শোভাযাত্রা সহ মহাপ্রসাদ বিতরণ হয়ে থাকে ।

সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিএসএফ এর জনৈক আধিকারিক জানান, যেহেতু ভারত বাংলা সীমান্তে অবস্থিত মন্দির, তাই এই মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব তাদের । পুজোর কয়দিন যাতে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হতে হয় তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে তাদের । অতিরিক্ত ভাবে বিএসএফ এর সদস্য মোতায়েন করা হবে । তিনি বলেন, ভারত বাংলা সীমান্তে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে দুর্গাপুজোর আনন্দ দারুণভাবে উপভোগ করতে পারবেন তারা।



সুদীপ দাস

শ্রীভূমি


No comments

Powered by Blogger.